1. admin@thedailyintessar.com : rashedintessar :
শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন

নগরান্তরের ধুলাঘর : অন্তরীপের কথা

ফারহান আরিফ :
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২১

নাহ। খুঁজে পেলামনা। না বাঁশুরিয়াকে, না সেই বাঁশির সুর। আমাদের বাড়ির পেছনের দিকটায় বিস্তীর্ণ জমি। বাড়ির ডানপাশে লাগোয়া আরেকটা বাড়ির পেছনের বাগানটা অন্তরীপের মত মিশেছে সেই জমিতে। এই অন্তরীপ-সদৃশ বাগানটার কোন একটা গাছের ছায়াতেই হয়তোবা ছিল সেই বাঁশুরিয়ার বসার স্থান। কানটাকে সজাগ করে রাখলাম ক’দিন। কিন্তু বাঁশির সুরটা আর এলোনা।

আমাদের বাড়িটাও আমূল বদলে গেছে। শিলকড়ই গাছগুলো এখন আর নেই। পুঁজিবাদী জীবিকার বলি হতে হয়েছে এদেরও। আমাদের নগরান্তরে পরোক্ষ অবদান রয়েছে এঁদের। পুকুর পাড়টার দিকে তাকালাম। শিলকড়ইয়ের জায়গা দখলে নিয়েছে বিচিত্র গুল্মলতা। সূর্যের প্রখর রোদ ঠিকরে পড়ছে ছোট ছোট গাছগুলোর পাতা ভেদ করে। পুকুরের এপার থেকেই বিস্তীর্ণ জমির দেখা মেলে এখন। শুধু আগের সেই নান্দনিকতা এখন আর নেই।

ফেলে আসা দিনগুলোতে পুকুর পাড়ে বসেই দিগন্ত ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতাম! মনে হত- এই জমির শেষটাতে যেখানে গাছগুলো সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানেই বুঝি পৃথিবীর শেষ! আকাশটা বুঝি মিলিয়ে গেছে সেখানেই! নয়তো সূর্যটা প্রতিদিন সেখানেই অস্ত যাবে কেন? এখানে বসে আকাশজোড়া ঘুড়ির রাজত্ব দেখতাম। বায়না ধরে আম্মুর হাতে বানিয়েও নিয়েছিলাম একটা। দেখতাম, আকাশটা হঠাত ধূসর হয়ে যেতো প্রতিদিন। সে ধূসরতার মাঝেই শত-সহস্রাধিক পাখির একসাথে নীড়ে ফিরে যাওয়া!

বর্ষার সৌন্দর্য ছিল আরো চিত্তাকর্ষক। চোখের শেষ সীমা অবধি জলরাশি। জোয়ার এলে এই জমিকে মনে হত মহাসাগরের প্রতিচিহ্ন! হাঁটুসমান, কখনোবা বুকসমান পানির মধ্যেই অনেককে দেখতাম স্থান বদলাচ্ছে মাছ ধরার নেশায়। কেউ আবার হাঁসগুলোকে বাড়ি ফেরাচ্ছিলো। দূর থেকে ভেসে আসতো হাঁস ডাকার গ্রামীণ শব্দগুলো।এখন আর সেই জমিটা নেই। জমির বুকে এখন নগরান্তরের মহিমা। পিচঢালা পথটাকে সাক্ষী করে আশেপাশে গড়ে উঠেছে একের পর এক বাড়ি। বাড়িগুলোর ডিজাইনেও রয়েছে নগরান্তরের নান্দনিকতা। যতটুকু জমি অবশিষ্ট আছে তাতে নেই মৌসুমি শস্যের উপস্থিতি। সরিষা ক্ষেতের চোখজুড়ানো সুখটা যে এখন আর নেই , তা সহজেই অনুমেয়। এখন এখানে বছরে চারবার করে ধান ফলানো হয়। আউশ, আমন, বোরোকে ছাপিয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপ চলছে ইরি ধানের। সেচ ব্যাবস্থা আর জমি নিড়ানোতে এসেছে নগরান্তের পরিবর্তন। ট্রাক্টরের লম্বা লম্বা ধাতব দাঁতের কাছে লাঙলের জোয়াল অসহায়। বেচারা বলদ গরুগুলোকে পেয়েছে বেকারত্বের অভিশাপ! তাই সারা বছর নেয়ে খেয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে কুরবানির হাটে বিকিয়ে যাওয়ার।

এখানে এসে এখন আর হৃদয়জুড়ানো বাতাসের বিলাসিতা নেই। ভরসা সেই কৃত্রিম পাখাতেই। আর বাকিটা দাবদাহে হাঁসফাঁস……..

সংবাদটি সংরক্ষন করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন..

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও খবর...

© All rights reserved  2021 The Daily Intessar

Developed ByTheDailyIntessar
error: Content is protected !!