শিল্পপ্রসিদ্ধ জেলা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাংনাহাটি এলাকায় সবুজ প্রকৃতির মাঝে নির্মিত হাজী আবদুস সাত্তার জামে মসজিদে। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায়ী হাজী আব্দুস সাত্তারের নিজস্ব অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
পাঁচ একর জায়গা জুড়ে বিশাল কমপ্লেক্সে নির্মিত দারুল উলুম আব্দুস সাত্তার কওমী মাদ্রাসা ও মসজিদটি। বিশাল রাজকীয় মূল ফটক পার হতেই চোখে পড়ে সবুজ প্রান্তর আর বাগানে ঘেরা এই মসজিদ। শান্তির আহ্বানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ দু’টি মিনার। ১১০ ফুট বিশিষ্ট দু’টি পাশাপাশি নয়নাভিরাম মিনার থেকে ভেসে আসে সুমধুর আযান।
একটি আধুনিক স্থাপত্যের, ব্যতিক্রমধর্মী ও আন্তর্জাতিক মানের অলঙ্করণে শোভিত এই মসজিদ। ২০১২ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালে শেষ হয় বিশাল কমপ্লেক্সটির নির্মাণকাজ।
দেশি-বিদেশি প্রসিদ্ধ প্রকৌশলীরা মিলে মসজিদের প্রতিটি ইঞ্চিতে রেখেছেন নিখুঁত নির্মাণ ও আভিজাত্যের ছোঁয়া। মানব মনে স্রষ্টার অসীম শক্তির প্রকাশকে নির্দেশনা দেয় ৪টি বিশাল গম্বুজ। অপূর্ব সুন্দর নীল টাইলসে মোড়ানো গম্বুজগুলোর ভেতরেও করা হয়েছে নানান কারুকাজ। পুরো মসজিদের মেঝে আর ভেতর-বাইরের দেয়াল মূল্যবান মার্বেল পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মসজিদের মূল অংশটি দোতলা এবং উপরের তলাটিও সমান কারুকার্যমণ্ডিত। এছাড়া দ্বিতীয় অংশটি করিডোর ঘেরা প্রাঙ্গণ ও সংলগ্ন উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ মিলিয়ে ৫ হাজার মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন এখানে।
মসজিদটি আরবি ক্যালিগ্রাফি এবং ইসলামী নকশা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। চমৎকার দৃষ্টিনন্দন শিল্প সুষমায় সজ্জিত এ স্থাপনায় তিনশরও বেশি স্থানে ক্যালিগ্রাফি ও অলঙ্করণের কাজ আছে। দেশ এবং বিদেশের শীর্ষস্থানীয় ক্যালিগ্রাফাররা এই মসজিদের ক্যালিগ্রাফি ও নকশা সম্পাদনা, তদারকি, সমন্বয় ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নতুন করে অঙ্কনের কাজ ও স্থাপনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
মূল স্থাপনার বাইরে এ্যাকোয়া হোয়াইট মার্বেল পাথরে প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট সুলুস লিপিতে আরবি ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে মার্বেল পাথর, জিপসাম টেরাকোটা, টাইলস গ্লেজ ফায়ার ও রঙের মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি ও অলঙ্করণ করা আছে। বাইরে ও ভেতরে পবিত্র কুরআনের আয়াত দিয়ে সুলুস শৈলীতে এসব ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে।
আলো বাতাস প্রবেশের সুব্যবস্থা থাকায় দিনের বেলায় মসজিদের অভ্যন্তর থাকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল আর আলোকিত। তাছাড়া মসজিদজুড়ে অত্যাধুনিক ডিজাইনের লাইট, সাউন্ড মসজিদটিকে করেছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদ্যুৎ চলে গেলেও রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন জেনারেটর ব্যবস্থা।
নামাযের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পানি দিয়ে ওজু করা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। হাজী সাত্তার মসজিদ কমপ্লেক্সেই ওজুখানা হিসেবে সংলগ্ন ভবন রয়েছে, যেখানে থাকছে নিরবচ্ছিন্ন বিশুদ্ধ পানি।
মসজিদ কমপ্লেক্সের দারুল উলুম আব্দুস সাত্তার কওমী মাদ্রাসাটি আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে পুরো কমপ্লেক্সটিকে করেছে পরিপূর্ণ। সেখানে ছাত্রদের অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং সারিবদ্ধভাবে ক্লাসরুমে প্রবেশ করার চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে প্রায় ৩০০ জন ছাত্র হোস্টেলে থেকে পড়ছেন, যাদের শিক্ষা দিচ্ছেন ৩০ জন শিক্ষক। শিক্ষকদের আন্তরিক পাঠদান আর থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য সুব্যবস্থা নিয়ে মাদ্রাসাটি ধর্মীয় শিক্ষায় স্থাপন করেছে অনন্য নজির।
যেভাবে যাবেনঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে মাওনা ফ্লাইওভার থেকে পূর্বদিকের রাস্তা ধরে ৫ কিঃমিঃ এগিয়ে গেলেই হাতের ডানে মসজিদটি চোখে পড়বে। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে নেত্রকোণা বা ময়মনসিংহ গামী যেকোনো বাসে মাওনা চৌরাস্তা নেমে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যেতে হবে। মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের বাসে উঠে মাওনা যেতে পারবেন।