1. admin@thedailyintessar.com : rashedintessar :
দখিনা হাওয়া সি-বিচ : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপালী নিকেতন। - The Daily Intessar
বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

দখিনা হাওয়া সি-বিচ : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপালী নিকেতন।

জাবের হোসেন :
  • Update Time : বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

বাংলাদেশের বৃহওম দ্বীপ ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা ভূমি রূপালী দ্বীপ মনপুরা। চতুর্দিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ-শ্যামল ঘেরা মনপুরা। সুবিশাল নদী, চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগানে সমৃদ্ধ। মনপুরা উপজেলা দেশের মানুষের কাছে যেমন আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গা তেমনি বিদেশিদের কাছেও। এ দ্বীপে সকালবেলার সূর্য যেমন হাসতে হাসতে পূর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেলবেলাতে আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়।

দখিনা হাওয়া সি-বিচ :পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মনপুরা ‘দখিনা হাওয়া সি-বিচ’। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি, মায়াবী হরিণ, সোনালী ধান আর ম্যানগ্রোভ বনানী ঘেরা মনপুরায় পর্যটক আকর্ষণে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এই বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। মেঘনা বেষ্টিত দ্বীপ উপজেলার দক্ষিণভাগে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বালি জমে গড়ে উঠেছে এক কিলোমিটার লম্বা সমুদ্র সৈকত। এটি উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে রহমানপুর গ্রামে অবস্থিত। পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকলে সৈকটির নাম দেয়া হয় ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সি-বিচ। জানা গেছে, কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতোই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত এখন এই সি-বিচ।

ভোলা জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার মোহনায় ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। মিয়া জমিরশাহ’র স্মৃতি বিজড়িত মনপুরা দ্বীপ অতি প্রাচীন। একসময় এ দ্বীপে পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় লম্বা লোমওয়ালা কুকুর। মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যানগ্রোভ বাগান। ছোট বড় ১০টি চর ও বনবিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি বিশাল মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। এই চরগুলো হলো চরতাজাম্মুল, চর পাতালিয়া, চর পিয়াল, চরনিজাম, চর সামসুউদ্দিন, লালচর, ডাল চর, কলাতলীর চর ইত্যাদি। মনপুরা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে মনপুরা ফিশারিজ লিঃ। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২১০ একর জমিতে গড়ে উঠা খামার বাড়ীটি গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে।

এখানে বিশেষ বিশেষ কিছু খাবার লক্ষ্য করা যায়। শীতের হাঁস, মহিষের দুধের দধি, টাটকা ইলিশ, বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি। মেঘনা নদী থেকে ধরে আনা টাটকা ইলিশ ও চর থেকে আনা কাঁচা দুধের স্বাদই আলাদা। ঐতিহাসিক বেভারিজ মনপুরার নামকরণ নিয়ে লিখেছেন, জনৈক মনগাজি নামের ব্যক্তি সে সময়ের জমিদার থেকে মনপুরা জমি লিজ নেন অষ্টাদশ শতাব্দীর যুগে । তখন তার নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরণ হয় মনপুরা। জনৈক ব্যক্তিদের মতে মনগাজি নামের লোকটি বাঘের থাবায় প্রাণ হারালে তখন তার নামানুসারে নামকরণ হয় মনপুরা। স্থানীয়দের মতে এখানকার খাটি দুধ খেয়ে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা দেখে মানুষের মন ভরে যেত। এজন্য এর নামকরণ করা হয় মনপুরা।

১৮৩৩ সালে মনপুরাকে ভোলা জেলার অধীনে চিরস্থায়ী বন্ধোবস্ত দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে মনপুরাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। আয়তন ৩৭ হাজার ৩১৯ বর্গ মিটার। ইউনিয়ন চারটি, গ্রাম ৩৮টি, জনসংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। কৃষি জমি ৩০ হাজার ৫০৪ একর, বনায়ন ১১ হাজার ১১৯ বর্গমিটার, রাস্তার দুপাশে বনায়ন ১০০ কিলোমিটার, সর্ব মোট রাস্তা ৫৬৬ কিলোমিটার। প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৭ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮টি, মাদ্রাসা মোট ১০টি, কলেজ ২টি, শিক্ষার হার শতকরা ৬০। মসজিদ ১১০টি, মন্দির ১৩টি, সাইক্লোন সেন্টার ২৭টি, হাট-বাজার ১১টি, নলকূপ ৫৫০টি, আদর্শ গ্রাম ২১টি।

যোগাযোগ : প্রতিদিন ঢাকা থেকে একটি লঞ্চ বিকাল সাড়ে ৫টার সময় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে মনপুরা হয়ে পরদিন সকাল ৯টার সময় হাতিয়া পৌঁছে। আবার শুধু মনপুরার লঞ্চও আছে। ঐ লঞ্চটি আবার হাতিয়া থেকে ছাড়ে দুপুর ১২ টায়। মনপুরাতে আসে দুপুর ১টায় এবং ১ ঘণ্টা যাত্রা বিরতি থাকে রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে। মনপুরার মানুষ যে লঞ্চে করে ঢাকা থেকে মনপুরা আসেন আবার ঐ একই লঞ্চে করে ঢাকায় চলে যান। এছাড়া ঢাকা কিংবা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমুদ্দিন সি-ট্রাক ঘাট থেকে মনপুরা যাওয়া যায়।

সংবাদটি সংরক্ষন করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন..

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও খবর...

© All rights reserved  2021 The Daily Intessar

Developed ByTheDailyIntessar