পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি পর্যটকদের পদচারণায় প্রায় সময় মুখরিত থাকে। ভ্রমন বিলাসি ও সৌন্দর্য পিপাসু অসংখ্য মানুষের উপচেপড়া ভিড় জমে রাঙ্গামাটি শহরজুড়ে। এ জেলার নয়নাভিরাম সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ, অসংখ্য পাহাড়, ঝরনা, বিশেষ করে সুবলংয়ের মনোরম প্রাকৃতিক জলপ্রপাত, পযটন এলাকা, ঝুলন্ত ব্রিজ, ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ী, রাজবন বিহার, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানসহ অসংখ্য দর্শনীয় ও উপভোগ্য ও দর্শন করতে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পযটর্করা ভিড় জমান রাঙ্গামাটিতে। পাশাপাশি বিদেশী পযর্টকদের আগমনও লনীয়। যদিও বর্তমানে নিরাপত্তার কারনে অবাধে বিচারণ করতে চাইছেন না বিদেশীরা। খাগড়াছড়ি সড়কের গুনিয়াপাড়া থেকে বিদেশী অপহরণের ঘটনায় যথেষ্ট বিচরণ চোখে পড়ে।
শীতের শুস্ক মৌসুমটাই রাঙ্গামাটিতে বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় ভ্রমন বিলাসের আনন্দ-আমেজ জমে ওঠে পুরোদম। মূলত বর্ষা শেষের পরপরই ভিড় জমান রাঙ্গামাটিতে। আর এই ভিড় জমে থাকে বসন্তকাল পর্যন্ত। যে কেউ সপরিবারে , বন্ধু বান্ধব, আত্নীয় স্বজন নিয়ে বেড়িয়ে যেতে পারেন পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি। আসুন অন্তত জীবনে একবার হলেও ঘুরে যান প্রাকৃতিক নৈসর্গিক লীলা ভূমি পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটি।
কিভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটিত চলাচল রয়েছে এস আলম, চ্যালেঞ্জার, ডলফিন,সৌদিয়াসহ বিলাসবহুল বাস সার্ভিস। ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, মতিঝিল, কলাবাগান থেকে দিনে এবং রাতে ছাড়ে বাসগুলো। এছাড়া চট্রগ্রাম হয়েও আসা যায় খুবই সহজে।চট্রগ্রামের মুরাদপুর বিশ্বরোডেই রাঙ্গামাটির বাস স্টেশন। সেখান থেকে ছাড়ে বিআরটিসি এবং বিরতিহীন বাস সার্ভিস। কেসি দে রোড থেকেও এস আলম, সৌদিয়া,চ্যালেঞ্জার বাস পাওয়া যায়।
যাওয়ার পথে যা দেখতে পাবেনঃ
চট্রগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে বাসে চড়ার সময় বেতবুনিয়ায় পা বাড়ালেই রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। এ বেতবুনিয়ায় দেশের সর্বপ্রথম উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রটি অবস্থিত। এরপর রানীরহাট বাজার অতিক্রম করে সামনের দিকে তাকালে চোখে পড়বে সুউচ্চ অসংখ্য পাহাড়ের সারি। সামনের দিকেএবং দক্ষিণ-পূর্বে দন্ডায়মান অবস্থায় সবচেয়ে উচু যে পাহাড়টি চোখে পড়বে সেটি ফুরমোন পাহাড়।
সুবলং ঝরনাঃ
রাঙ্গামাটি শহর থেকে 10-12 কিলোমিটার দূরে অবসথিত মনোরম এই ঝরনাটি। শীত মৌসুমেও এটি জেগে থাকে। কাছে গেলেই আরও বেশি আকর্ষনীয় হয় এটি। ঝরনার পানিতে গোসলের আনন্দটাই অন্যরকম। ইতিমধ্যে বহুলভাবে পরিচিতি লাভ করেছে এই ঝরনা। দেশীয় ইঞ্জিন নৌকায় এই ঝরনা দেখে আসতে আসা- যাওয়াসহ সময় লাগে 2 ঘণ্টার মতো।
রাজবাড়িঃ
রাঙ্গামাটি শহরেই অবস্থিত রাজবাড়ি। চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও তার মা রানী আরতি রায় এ রাজবাড়িতে থাকেন বর্তমানে। চারদিকে হ্রদ বেষ্টিত এই রাজবাড়ি পুরনো হলেও দেখতে ও বেড়াতে ভীষন ভাল লাগে। রাজদরবার, কাচারি, সজ্জিত কামানসহ দেখার মতো অনেক কিছু আছে।উপজাতীয় পোশাকও পাওয়া যায়।
রাজবন বিহারঃ রাজবাড়ির পাশেই আন্তর্জাতিক খ্যাত এই বৌদ্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। এখানে অবস্খান করেন বৌদ্ব আর্য পুরুষ শ্রাবক বুদ্ব সর্বজন পূজ্য শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাসহবির বনভান্তে। এই বৌদ্ব বিহারে প্রত্যেক বছরের কঠিন চীবর দানোৎসবে লাধিক মানুষের সম্মেলন ঘটে। এছাড়া প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনাথী ভিড়ে মুখরিত থাকে রাজবন বিহার এলাকা। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বেশ কয়েকটি বৌদ্ব মন্দির, বিশ্রামগার, হাসপাতাল, তাবতিংস স্বর্গসহ অনেক কিছু রয়েছে দেখার মত।
পর্যটন মোটেলঃ
রাঙ্গামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত সরকারি পর্যটন মোটেল। পর্যটকদের জন্য খুবই দৃষ্টিকড়া ও আকর্ষনীয় স্থান এটি।
ঝুলন্ত ব্রিজঃ
পর্যটন মোটেলেই অবস্থিত ঝুলন্ত ব্রিজটি,যা পর্যটন এলাকাকে আরও বেশি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত করেছে। সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে এটি।
পেদা টিং টিং :
বেসরকারি পর্যটন সংস্থা হলিডে ব্লাস্ট এন্ড পেদা টিং টিং। রাঙ্গামাটি শহর থেকে মাএ 4-5কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই হ্রদের ভসমান একটি পাহাড়ে অবস্থিত এই পর্যটন সংস্খা। এখানে রেস্তোরা,কটেজ, নৌবিহার ব্যবস্থা, সেগুন বাগান, বানর রয়েছে। ইচ্ছে করলে মনোজ্ঞ কোন অনুষ্ঠানও করা যায়।
উপজাতীয় জাদুঘরঃ
রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান রাস্তার পাশেই এই জাদুঘরটি রয়েছে। উপজাতীয় কৃষ্টি,সংস্কৃতি, জীবনধারার নানান নিদর্শন সাজানো রয়েছে এখানে।এছাড়াও আরো দেখার মতো সুন্দর সুন্দর কিছু যায়গা-ডিসি বাংলো, কাপ্তাই বাঁধ, হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট, জাতীয় উদ্যানসহ দেখার মতো আরো অনেক স্থাপনা, স্খান ও নিদর্শন রয়েছে। যা সহজে দৃষ্টি কাড়ে।