পৃথিবীজুড়ে প্রেমের প্রতীক হিসেবে পর্যটকদের কাছে এক অনন্য দর্শনীয় স্থান তাজমহল। তাজমহলের সামনে দাঁড়ালে,নিজের অজান্তেই দু’চোখের পাতা ভিজে যায়। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টি। যার কোন উপমা নেই। উৎপ্রেক্ষা নেই, নেই চিত্রকল্প। যার খ্যাতি শুধু বিশ্বজোড়া।
তাজমহল দেখে মনে হয় যেন আজও সে প্রেমের কথা কয়, সত্যি তো তাজমহল যেন বলে অমর প্রেমের কথা। শুদ্ধ ভালবাসার উদাহরন দিতে গেল তাজমহলের নামটি যেন বলতেই হয়। সম্রাট শাহজাহানের অনুপম ভালোবাসার নিদর্শন আগ্রার তাজমহল। ভালোবাসার অমর নায়ক হিসেবে মধ্যযুগে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি আশ্চর্য স্থাপনা রচিত হয়েছিল তার হাত দিয়ে। আর প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে সম্রাট শাহজাহান তৈরি করেছিলেন সেই বিখ্যাত তাজমহল।
আগ্রার ঐ তাজমহলের অনুকরণে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার আহসান উল্লাহ মনি নির্মাণ করেছেন তার নিজ গ্রাম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে প্রায় ১৮ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেন ‘বাংলার তাজমহল’। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এর উদ্বোধন হয়। এছাড়াও আশপাশে পর্যটনের জন্য প্রায় ৫২ বিঘা জমি সংরক্ষিত রয়েছে। ‘বাংলার তাজমহল’।
দিগন্ত বিস্তৃত অনাবিল সবুজের সমারোহ, নাম না জানা হাজারো পাখির কিচিরমিচির করা বিকেল। সব মিলিয়ে এক স্বপ্নময় রাজ্যে বিচরণের অপার সম্ভাবনাময় উপাদান নিয়ে সাংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে বাংলার তাজমহল। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তাজমহলের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে ১৭২টি কৃত্রিম ডায়মন্ড যা বেলজিয়াম থেকে আনা হয়েছে। তাজমহলটি তৈরিতে বিদেশি উপকরণ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে একজন দক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে এর মাপ এনে পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে স্থাপত্য শিল্পের ওপর দক্ষ ছয়জন টেকনিশিয়ান দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
দক্ষিণে তাজমহল, দু’পাশে নিরিবিলি বসার স্থান ও উত্তরে প্রবেশ পথ। তাজমহলের ভেতরে ‘রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিও’ সেখানে ইচ্ছে করলে আপনি বিভিন্ন স্টাইলে আর্জেন্ট ছবি তুলতে পারবেন। এদেশের সিংহভাগ মানুষের ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ভারতের আগ্রার তাজমহল দেখার সুযোগ হয়ে উঠে না। কিন্তু বাংলার তাজমহলটি মাত্র ৭০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে দেখে অন্তত দর্শনার্থীরা আগ্রার তাজমহলের ধারণা পাবেন।
তাজমহলটিকে ঘিরে বিভিন্ন হোটেল, খাবার দোকান, শৌখিন জিনিসপত্রের দোকান, আবাসিক ভবন ও পিকনিট স্পটসহ বেশ কিছু অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। যা স্থানীয় অর্থনীতি ও পর্যটনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হয়েছে। বাংলার তাজমহলের রূপ-মাধুর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে বাংলার তাজমহলে খুব সহজেই যাওয়া যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে কুমিল্লা, দাউদকান্দি অথবা সোনারগাঁগামী যেকোনো গাড়িতে চড়ে মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে নামতে হয়। সেখান থেকে সিএনজি বা স্কুটারে সহজে যাওয়া যায় তাজমহলে। অন্যভাবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে ভৈরব, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জগামী যেকোনো গাড়িতে চড়ে বরপা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হয়, এখান থেকে সিএনজি স্কুটারে পৌঁছে যেতে পারেন তাজমহলে।