প্রাচীন বাংলার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বেষ্টিত সোনারগাঁও জাদুঘর। ঢাকার খুব কাছেই অবস্থিত এই আকর্ষণীয় পিকনিক স্পটটি। এখানকার লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের বিশাল চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট। এখানে বনভোজনের পাশাপাশি দেখে আসতে পারেন বাংলার ঐতিহাসিক নানান স্মৃতি। এখানকার লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন যাদুঘর, ঐতিহাসিক পানাম নগর, গোয়ালদী মসজিদ, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের মাজার ছাড়াও আরো অনেক ঐতিহাসিক জায়গা দেখে আসতে পারেন।
বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনার গায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন অল্প সময়ে। নদী-নালা, খাল-বিল পরিবেষ্টিত এবং অসংখ্য গাছপালা সবুজের সমারোহ আপনাকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। আর এজন্য দূরের ভ্রমন পিপাসু মানুষ, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং বিদেশী পর্যটকরা প্রতিনিয়ত আসছে। ঈশা খাঁর বাড়ীটি অসাধারণ স্থাপত্যশীল আর মধ্যযুগে পানাম নগরী আপনাকে কিছ্ক্ষুণের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে ব্যস্ততা, দুঃখ, বেদনা।
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভেতরে রয়েছে প্রধান ফটকে দুজন অশ্বারোহী, গরুর গাড়ির ভাস্কর্য, লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সদ্য নির্মিত জয়নুলের আবক্ষ ভাস্কর্য, ক্যান্টিন, লোকজ রেস্তোরাঁ, সেমিনার হল, ডাকবাংলো, কারুশিল্প গ্রাম, কারুশিল্প, জামদানি ঘর, কারুমঞ্চ, কারুব্রিজ, মৃৎশিল্পের বিক্রয়কেন্দ্র, গ্রামীণ উদ্যান, আঁকাবাঁকা দৃষ্টিনন্দন লেক, বড়শিতে মাছ শিকার. নৌকায় ভ্রমণ ও বনজ, ফলদ, ঔষধিসহ শোভাবর্ধন প্রজাতির বাহারি বৃক্ষরাজি।
কারুশিল্প গ্রামে বৈচিত্র্যময় লোকজ স্থাপত্য গঠনে বিভিন্ন ঘরে কারুশিল্প উৎপাদন, প্রদর্শন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দোচালা, চৌচালা ও উপজাতীয় মোটিফে তৈরি এ ঘরগুলোয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা, অচেনা, আর্থিকভাবে অবহেলিত অথচ দক্ষ কারুশিল্পীরা বাঁশ-বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎশিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী ইত্যাদি কারুশিল্প উৎপাদন, প্রদর্শনী ও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জাদুঘরের অভ্যন্তরে আরো রয়েছে বিনোদন ব্যবস্থার জন্য স্থায়ী পিকনিক স্পট, স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী নির্মিত আঁকাবাঁকা মনোরম লেক।
ফাউন্ডেশনের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সবুজ চত্বরে স্থাপন করা হয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য। শিল্পী শ্যামল চৌধুরী ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। সম্প্রতি এ ভাস্কর্যটির ফলক উন্মোচন করা হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের প্রবেশ পথের সামনেই আগত পর্যটকদের বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির প্রয়াসে আম, লিচু, পাম, নারিকেল, মেহগনি ও গুবাকতরুর সারির শ্যামল, স্নিগ্ধ, হৃদয় জুড়ানো নিরিবিলি পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে ঐতিহ্য নামের বিনোদন স্পট। এ স্পট স্বস্তিকর ও আনন্দদায়ক বিনোদনে দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করবে। এ স্পট ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট ফি রয়েছে। এছাড়া ফাউন্ডেশনের প্রধান প্রবেশ গেটের আশপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিনোদন স্পট ও বিলাসবহুল সোনারগাঁ মিনি চায়নিজ রেস্তোরাঁ।
যেভাবে যেতে হবে: ঢাকা থেকে সরাসরি বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (জাদুঘরে) আসা যায়, যদি আপনি নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে আসেন। আপনি যদি বাসে আসতে চান তাহলে গুলিস্তান থেকে ‘স্বদেশ, বোরাক ও সোনারগাঁ সুপার সার্ভিস’ নামে বাস সার্ভিসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এসে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশাযোগে সোনারগাঁ জাদুঘরে যেতে হবে। মোগড়াপারা বাসষ্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি:মি: অভ্যন্তরে সোনারগাঁ যাদুঘরের অবস্থান এবং এর সঙ্গেই রয়েছে পানাম নগরী। বাস, মিনিবাস বেবি-ট্যক্সি, মোটরছাইকেলসহ যে কোন বাহনেই এখানে আসা যায়। যাদুঘরের গেটেই রয়েছে সকল প্রকার যানবাহনের নিরাপদ র্পাকিং স্থান।