খুম’ হলো মারমাদের আঞ্চলিক ভাষা। এ ভাষায় ‘খুম’ শব্দের অর্থ হলো ‘জলপ্রপাত’। ‘জলপ্রপাত’ শব্দটির মধ্যেই যেন রয়েছে এক অনিবার আকর্ষণ। নাফাখুমের পানি প্রবাহের ধারা ও বিশাল আকার নিয়ে সফেদ জলরাশি পতনের শব্দে মনে হবে নাফাখুম যেন বাংলাদেশের ‘নায়াগ্রা’।
যাতায়াতের রুট: ঢাকা থেকে বান্দরবান: বাস, বান্দরবান থেকে থানচি: জীপ, থানচি থেকে রেমাক্রি: নৌকা, রেমাক্রি থেকে নাফাখুম: পাহাড়ি ও ঝিরি হাঁটাপথ।
নাফাখুম ভ্রমণ বৃত্তান্ত :ঢাকা থেকে বাসে চড়ে রওনা হবেন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের উদ্দেশে, যেখানে পাহাড়ের আড়ালে চলে মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি খেলা। বান্দরবান যাওয়ার পথে রাত ২:০০টার দিকে যাত্রাবিরতিতে হোটেলে সেরে নিবেন রাতের খাবার।
১ম দিন : বাস থেকে নেমেই জীপ অর্থাৎ স্থানীয়দের ভাষায় ‘চান্দের গাড়ি’ নিয়ে সরাসরি থানচি। চলার পথেই সেরে নিবেন সকালের নাস্তা। থানচি পৌঁছার আগেই আর্মি চেকপোস্ট থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। পরে থানচি থানায় ও বিজিবি ক্যাম্প-এ নাম-ঠিকানা দিয়ে রিপোর্ট করে একজন গাইড নিতে হবে। থানচি থেকে ঠেলা নৌকা(এখন অবশ্য ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করে) নিয়ে রেমাক্রি বাজারের উদ্দেশ্যে নাফাখুম ভ্রমণের মূল ধাপ শুরু করবেন।
থানচি থেকে প্রায় ৪০০ ফুট উপরে রেমাক্রি বাজার আর নাফাখুম ৬৫০ফুট। তাই পানির স্রোতের প্রতিকূলে চলবেন। গিয়ে পৌঁছাবেন তিন্দু বাজার। অবশ্য এরই মধ্যে ৬-৭ বার নৌকা থেকে নেমে পানি পেরোতে হবে।মাঝখানে তিন্দু বাজারে কিছু সময় যাত্রাবিরতি দিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করবেন রেমাক্রির পথে। মাঝিরা অবশ্য বার বার নিষেধ করবেন এবং যেতে চাইবেন না। কারণ রেমাক্রির পথে বড়-পাথর/কেয়াপেজা এলাকা প্রচ- খরস্রোতা ও ঝুঁকিপূর্ণ; সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে দিনের আলো ফুরিয়ে যাবে ও অন্ধকার নেমে আসবে। তবে সঙ্গে চার্জার লাইট রাখবেন।
অবশ্য পূর্ণিমার আগের রাত হলে চাঁদের আলোয় পানি চকচক করবে। অথচ চারদিকে গহীন বন, ঘুটঘুটে অন্ধকার।যা-ই হোক, অবশেষে রেমাক্রি বাজার পৌঁছাবেন প্রায় রাত ৮:৩০-৯:০০ মিনিট বাজবে। স্থানীয়রা প্রায় সবাই ঘুমিয়ে থাকে এসময়।
২য় দিন : ভোরে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে আবারো শুরু করবেন অভিযান ‘নাফাখুম’ দর্শন। যাত্রার শুরুতে সঙ্গে নিবেন একজন স্থানীয় গাইড। তিনি শুধু গাইড নন, অনেক কাজে সহযোগিতাও করবেন। রেমাক্রি বাজার থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটার পর যাত্রা বিরতীতে কিছু খাবার খেয়ে আবার শুরু করবেন হাঁটাপথ। কোথাও উঁচু, কোথাওবা নিচু পথ আবার কখনওবা হাঁটুপানি, অথবা কোমরপানি।
বনের মধ্য দিয়ে এভাবে যাওয়ার সময় শুনা যাবে বিরল প্রজাতির পাখির মিষ্টিমধুর আওয়াজ, আবার কখনো নিথর নিঝুম নিস্তব্ধতা। খুমের পানি বয়ে চলা ঝিরিপথ বেয়ে যাওয়ার সময় প্রতি পদক্ষেপে রয়েছে নিবিঢ়ভাবে প্রকৃতিকে অনুভব করার সুযোগ। তবে এখানে খুব সাবধান থাকতে হয়, কেননা ঝিরিপথের অধিকাংশ জায়গাই খুব পিচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে একসময় শোনা যাবে অনেক দূর থেকে ভেসে আসা পানির শব্দ। আরও ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই বাড়তে লাগবে বিশাল জলরাশি পতনের অবিরাম শব্দ; সে এক অভূতপূর্ব রোমাঞ্চকর অনুভুতি! অবশেষে কাঙ্খিত ‘নাফাখুম’ অর্থাৎ ‘বাংলার নায়েগ্রা’-এর দেখা পাবেন।
অসাধারণ সুন্দর সেই সৌন্দর্য। জলপ্রপাতে ঝাঁপিয়ে পরার লোভ আর সামলাতে পারবেন না, তবে সাতার না জানা থাকলে নামবেন না। কেউ জলপ্রপাতের খুব কাছাকাছি যাবেন না। কেননা সেখানে গিয়ে সামান্য অসাবধান হলেই প্রাণ খোয়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
কাজেই, সাবধান! প্রকৃতির অবারিত এ সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে উপভোগ করলে এখানে রাত্রি যাপন করার সিদ্ধান্ত নিবেন। নাফাখুম থেকে ৫ মিনিটের দুরত্বে ‘ঔলাওয়া পাড়া’। সেখানে তাবু আর খাবারের আয়োজন করবেন। জলরাশি পতনের অবিরাম শব্দ, আকাশের পূর্নিমা, নিস্তব্ধ চারিপাশ, ঠান্ডা মিষ্টি আবহাওয়া আর তার সাথে পাহাড়ি মুরগীর বার-বি-কিউ। কিছু সময়ের জন্য নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ভাবলে কিছুটা কমই ভাবা হবে মনে হয়।
ঝর্ণার নাম আমিয়াখুম –
স্টাইলিশ আর সুন্দর ঝর্ণা আমিয়াখুম…..
আমিয়াখুম ঝরনা যাওয়ার পথেই পুরো বান্দরবনের একটা প্রতিচ্ছবি পাবেন বড় পাথুরিয়ার মত বড় বড় পাথর, অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য, ছোট ছোট ঝরনা সবই পাবেন এখানে।
কিভাবে যাবেন- দেশের যেকোন প্রান্ত হতেই রওয়ানা দিয়ে বান্দরবন আসুন তারপর বান্দরবন থানচি যাবার বাসস্ট্যান্ডে চলে আসুন সেখান থেকে বাসে করে থানচি চলে আসুন, থানচি আসতে প্রায় ৪/৫ ঘন্টার মতো লাগে ।
থানচি নেমে প্রধান কাজ হলো একজন গাইড ঠিক করা । এবার থানচি থেকে নৌকা নিয়ে রোমাক্রি বাজার আসুন, থানচি থেকে রোমাক্রি স্হানিয়রা প্রতিজন ২০০ টাকা করে তবে টুরিষ্টদের দেখলে রিজার্ভ ৩০০০/৪০০০ হয়ে যায়। যদি থানচি থেকে সকাল সকাল রওয়ানা দেন তাহলে রোমাক্রি নেমে আল্লাহর নাম নিয়ে হাটা ধরুন নাফাখুম ঝরনার উদ্দেশ্য প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা হাটলে আপনারা দেখা যাবেন অসাধারণ এক ঝরনা “”নাফাখুম”” অনেকে আবার আদর করে একে বাংলার নায়াগ্রা নাম দিয়েছে। যাই হোক এখানে ছবি তুলে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে এবার সাজাই পাড়ার দিকে রওয়ানা হয়ে যান। {নাফাখুম নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট উপরে দেওয়া আছে} নাফাখুম ঝরনা থেকে হাটা শুরু করলে ৩/৪ টা ঘন্টার মধ্যেই আপনারা পৌছে যাবেন
সাজিয়াপাড়া 🙂 সাজিয়াপাড়াতে রাতটুকু কাটিয়ে পরদিন সকাল সকাল উঠে পড়ুন এবং সাজিয়াপাড়া থেকে একজন স্হানীয় গাইড নিয়ে রওয়ানা হয়ে যান আমিয়াখুমের উদ্দেশ্যে [গাইডকে ৫০০ টাকা দিতে হবে]
প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিনঘন্টা অসাধারণ সব রাস্তা দিয়ে হাটলেই পেয়ে যাবেন আমিয়াখুম ঝরনা। আমিয়াখুম মনমতো দেখে আবার ফিরে আসুন সাজিয়াপাড়া, রাতটুকু সাজিয়াপাড়া কাটিয়ে সকালে আবার আগের রাস্তায় ফিরে আসুন থানচিতে ।
কিছু তথ্য ::# থানচি রেমাক্রি সাজিয়াপাড়া সব জায়গাতেই খুব কম টাকায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্হা আছে।