1. admin@thedailyintessar.com : rashedintessar :
অদেখা ঝর্ণা হাম হামের কাছে ঘুরে আসুন - The Daily Intessar
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৩ অপরাহ্ন

অদেখা ঝর্ণা হাম হামের কাছে ঘুরে আসুন

জাবের হোসেন :
  • Update Time : বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১

হযরত শাহজালাল (র), হযরত শাহপরাণ (র)-সহ ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর আমাদের বৃহত্তর সিলেট। সৃষ্টির সৌন্দর্য্য আর প্রকৃতির মাধুর্য্য- এই দুই মিলে যখন তৈরি হয় এক অপরূপ মিশ্রণ, তখন তার দর্শনে বেঁচে থাকার ইচ্ছে হয়ে ওঠে আরেকটু প্রবল।

আয়নার মত স্বচ্ছ পানি পাহাড়ের শরীর বেঁয়ে আছড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের গায়ে। গুড়ি গুড়ি জলকনা আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশার আভা। বুনোপাহাড়ের ১৫০ ফুট উপর হতে গড়িয়ে পড়া স্রোতধারা কলকল শব্দ করে এগিয়ে যাচ্ছে পাথরের পর পাথর কেটে সামনের দিকে তার গন্তব্যে। চারিপাশ গাছ গাছালি আর নাম না জানা হাজারো প্রজাতীর লাত পাতা ও লতা গুল্মে আচ্ছাদিত হয়ে আছে পাহাড়ী শরীর।

দীর্ঘ পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে অনেক কষ্টে গহীন অরন্যে এই জলপ্রপাতকে দেখতে প্রতিদিন আগমন ঘটছে দিনে দিনে পর্যটকদের ঢল।

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভুমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নতুন সন্ধান পাওয়া রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাত একনজর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠছে দিনে দিনে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিটের গহিন অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাড়ী এলাকার এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত।

স্থানীয় বাসিন্দারা একে হামহাম ঝর্না বা অনেকে হাম্মাম ঝর্না বলে ডাকে। এ জলপ্রপাতে যাবার কোনো রাস্তা না থাকলেও পর্যটকরা দূর্গম পাহাড় ও ছোট ছোট আকাবাকা এবং উচু উচু পাহাড় ডিংগিয়ে অনেক কষ্ট করে এখানে ছুটে যান প্রকৃতির নির্মল বিনোদন লাভের আশায়।প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টির অন্যতম একটি হলো বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে অবস্থিত ‘হাম-হাম’ জলপ্রপাত।

লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘদিন নিজের মহিমা লুকিয়ে রেখেছিল এই জলপ্রপাত। দূর্গম পথ আর লোকালয়ের বেশ বাইরে থাকার কারনে এতদিন এই জলপ্রপাতটি কারও চোখে পড়েনি। বর্তমানে এই জলপ্রপাতটি দেখতে আর রোমাঞ্চকর প্রবেশপথ পাড়ি দিতে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা প্রতিদিনই ভীড় করেন দেশের এই উত্তর-পূর্ব প্রান্তে। প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৃষ্টি এই হাম-হাম জলপ্রপাতটিতে বেড়িয়ে আসতে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।

সেখান থেকে হালকা খাবার আর পানীয় নিয়ে রওয়ানা দিতে হবে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার উদ্দেশ্যে। কমলগঞ্জ থেকে আদমপুরবাজার হয়ে আরও প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছবেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীনস্থ কুরমা চা বাগান এলাকায়। কুরমা চা বাগান থেকে দুই ধারে চা গাছের সবুজ নিচু পাহাড়ের সারির মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাবেন ভারতের সীমানা ঘেষে অবস্থিত চাম্পারায় চা বাগানে।

এখানে এসে ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে হাম-হাম যাওয়ার স্থানীয় গাইড জোগাড় করতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে চাম্পারায় চা বাগানের পূর্ব সীমায় অবস্থিত ‘কলাবন’ নামক এলাকা পর্যন্তই নিয়ে যেতে পারবেন গাড়ি।

এরপর থেকে খালি পায়ে বাংলাদেশ বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে আপনাকে। প্রায় ৫ কিলোমিটার এই পদযাত্রায় দেখা মিলবে গভীর জঙ্গল, পশুপাখি আর পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ। কখনও হাঁটু জল, কখনও পাথুরে পিচ্ছিল পথ, আবার কখনও লতাপাতা ধরে পাহাড়ে চড়ার মত দুঃসাহসিক অভিযান শেষে দেখা মিলবে সেই হাম-হাম জলপ্রপাতের। পাহাড়ের বুকে ঝর্ণার এই মিতালী দেখে মনে হবে যেন কবি পূর্ণেন্দু পত্রী’র ‘সেই গল্পটা’। যেখানে পাহাড় ভালবেসেছিল মেঘকে।

প্রায় ৫০ ফুট উপর থেকে ৫-৬ মিটার প্রশস্ত স্বচ্ছ পানির ধারা। এই অবিরাম জল প্রপাতের জল পতনের শব্দ এখানে পৌঁছার অনেক আগেই কানে পৌঁছবে। রুপান্তরিত বিশাল শিলাখন্ডের গা ঘেষে প্রতিনিয়ত পানির প্রবাহের ফলে পুরো জলপ্রপাত এলাকাটি হয়ে উঠেছে এক পিচ্ছিল রোমাঞ্চকর পর্যটন ক্ষেত্রে। যদি আপনি আরও একটু রোমাঞ্চ অনুভব করতে চান তাহলে লতাপাতা আর গাছের শিকড় ধরে উঠে যেতে পারেন জলপ্রপাতের শীর্ষ প্রান্তে, কিন্তু সেটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

জলপ্রপাতের নিচে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪০ মিটার বিস্তৃত স্বচ্ছ জলাশয় যেখানে চাইলে অনেকের মত আপনিও নেমে পড়তে পারেন শীতল পানিতে গা ভেজাতে। হাম-হাম জলপ্রপাত কে বা কারা প্রথম আবিষ্কার করে অথবা প্রথম অভিযান কারা চালিয়েছিল- এ ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য এখানে কারও কাছে নেই। তবে লোকমুখে শোনা যায় বছর কয়েক আগে একদল বাঁশ সংগ্রহকারী শ্রমিক বাঁশের খুঁজে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করলে দেখতে পান এই অপরূপ জলপ্রপাতটি। স্থানীয়দের মতে এই জলপ্রপাতের প্রকৃত নাম হলো ‘হাম্মাম’।

যার শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় গোসলখানা। আবার অনেকের মতে এই জলপ্রপাতের অদূরে বসবাসরত পাহাড়ি আদিবাসিদের ভাষায় পানি পড়ার শব্দকে বলা হয় হাম-হাম, আর এর থেকেই এর নাম হয়েছে হাম-হাম জলপ্রপাত। তবে বলতেই হয়, নামে কী আসে যায়। এখানে পৌঁছে আপনি যে নিরাশ হবেন না সেটা নিশ্চিত।

চারিদিক ঘন জঙ্গলে ঘেরা সম্পূর্ন প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই সুউচ্চ জলপ্রপাতটি দর্শনে আপনিও মুগ্ধ হয়ে ভূলে যাবেন দূর্গম পথের সব ক্লান্তি। তবে, অনেকেই মনে করেন প্রবেশপথের বিপদজ্জনক দূর্গম পথটাই এই হাম-হাম জলপ্রপাতকে করেছে আরও আকর্ষনীয় এবং মাধবকুন্ড থেকে আলাদা। হাম-হাম জলপ্রপাত দেখতে দেখতে যে কোন পর্যটকের মনে পড়ে যেতে পারে পূর্ণেন্দু পত্রী’র কবিতার লাইনগুলো- ‘পাহাড়টা, আগেই বলেছি ভালবেসেছিল মেঘকে.. … এখনো শেষ হয়নি গল্পটা। …… বিশ্বাস না হয় চিরে দেখতে পারো পাহাড়টার হাড়-পাঁজড়, ভিতরে থৈ থৈ করছে শত ঝর্ণার জল।

ইতিহাস:পাহাড়ি আদিবাসীরা জানান, পাহাড়ী অধিবাসীরা বলেন, পানি পতনের স্থানে এক সময় পরীরা গোসল করত । গোসল খানাকে আরবীতে হাম্মাম বলে ও জলের স্রোতধ্বনীকে ত্রিপুরার টিপরা ভাষায় হাম্মাম বলে তাই এ জলপ্রপাতটি হাম্মাম নামে পরিচিত। উপড়ে যে স্থান থেকে জল পড়ে সেখান থেকে ২শত ফুট পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা সীমানা।

হামহাম যাওয়ার জন্য বনের ভেতর দুটি পথ আছে। বনের শুরুতেই হাতের ডানে ও বামে পাশাপাশি পথ দুটির অবস্থান। একটা দিয়ে যেতে হবে আরেকটা দিয়ে আসবেন। ডানের পথ দিয়ে ঢুকে বাম দিয়ে বের হবেন এটাই ভালো, কারন ডানের পথটা দীর্ঘ এবং অনেক গুলো উঁচু টিলা ডিংগাতে হয়, যা ফেরার পথে পরলে খুব কষ্ট হবে, তাই প্রথমে কষ্ট করেন আসার সময় একটু আরাম করে আসবেন, ফেরার পথ কম না তবে সমতল বেশি, টিলা কম ডিংগাতে হয়।

হামহাম যাবার জন্য সাথে একজন গাইড নিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক। কারন প্রথমবার যারা যাবেন তাদের জন্য রাস্তা ভুল করাই স্বাভাবিক। এছাড়া ভ্রমণের সময় পাহাড়ি পথে হাটার সুবিধার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে প্রত্যেকের সাথে একটি করে বাশ নেয়া আবশ্যক। এছাড়া জোকের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাথে করে লবণ ও সরিষার তেল নিয়ে নিলে ভালো হয়।

যেভাবে যাবেন-১. ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে হবে। বাস অথবা ট্রেন এ যাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গল যেয়ে ১ টা হোটেলে উঠবেন। ভারী ব্যাগ-বাগেজ হোটেলে রেখে হালকা ১ টা ব্যাগ এ ১ সেট অতিরিক্ত কাপড় আর হালকা খাবার(বিস্কুট, জুস , পানি ), প্রাথমিক চিকিৎসা, মশার বা কিট এর জন্য অডমস নিয়ে নেবেন। মনে রাখবেন ওখানকার পানিতে জোক আছে।

২. খুব সকালে শ্রীমঙ্গল থেকে একটা জিপ ভাড়া করবেন কলাবাগান বস্তি যাওয়ার জন্য। ওখানে পৌঁছালেই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আসবে বাঁশের লাঠি বিক্রির জন্য। ওদের কাছ থেকে হালকা কিন্তু শক্ত একটা লাঠি নিয়ে নেবেন। ওরাও খুশি হবে, পথে আপনার উপকারে আসবে।

৩. এবার হাঁটার পালা। কলাবাগান বস্তি থেকে একজন গাইড নিয়ে নিতে পারেন। জিপের ড্রাইভারাও অনেক সময় গাইড এর কাজ করে, বলে দেখতে পারেন। কাদা, মাটি, পাহাড়, জঙ্গল ও ঝিরি পথ পাড়ি দিয়ে হাম হাম পৌঁছাতে ৩-৪ ঘন্টা লেগে যাবে। দু’টি পথে যাওয়া যায়। আশা করি গাইড সহজ পথে নিয়ে যাবে। পাহাড় থেকে নামার পর ঝিরি পথে পাথর ও পানির ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় সাবধানে হাঁটবেন।

৪. দয়া করে পৌঁছানোর পর সময়টা দেখে নেবেন। ঐখানে সময় কখন কোন দিক দিয়ে যাবে বুঝতে পারবেন না। ফেরার সময়টা আগেই ঠিক করে নেবেন।

সংবাদটি সংরক্ষন করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন..

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও খবর...

© All rights reserved  2021 The Daily Intessar

Developed ByTheDailyIntessar