শরতের গাঢ় নীলাকাশ। আর সাদা সাদা নরম মেঘের ফাঁক গলে বেড়িয়ে আসা সোনা ঝরা রোদ। আর কাশবনে রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠেছে প্রকৃতি। পশ্চিমে হেলে পড়া সেই সূর্যের কিরণ যখন কাশফুলের উপর পড়ে তখন এই দুইয়ের মিথষ্ক্রিয়ায় অদ্ভুত এক আভা প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে। যা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। যত দূরে চোখ যায় দৃষ্টিজুড়ে শুধু কাশবন আর কাশবন। বিস্তীর্ণ এলাকা যেন শুভ্রতার চাদরে মোড়া এক অপরুপ সৌন্দর্যের রাজ্য।
এভাবেই বর্ণনা করা যায় রাজধানীর অদূরে উত্তরা দিয়াবাড়ির এই মোহনীয় সৌন্দর্য। ইট কাঠ, কংক্রিটের এই কর্মব্যস্ত শহরে একটু প্রশান্তি ভরে দম নেয়ার স্থান তেমন নেই বললেই চলে। এক টুকরো সবুজের দেখা মেলাই যেখানে ভার, সেখানে সবুজের প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। উত্তরা দিয়াবাড়িতে এলে সেই অসম্ভবকে সত্যি বলে মনে হবে।
দিয়াবাড়ির আরেকটি অন্যতম দর্শণীয় জায়গা হচ্ছে বিশাল বটগাছ। আজকাল নাটকে এই বটগাছটি প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। এক বিশাল বটগাছ আর তার দুপাশে রাস্তা। এই বটগাছেরও দেখা মিলবে দিয়াবাড়িতে। এই জায়গারটার নাম এখন হয়ে গেছে ‘দিয়াবাড়ি বটতলা’। প্রায় সময় সেখানে কোন না কোন নাটকের শুটিং চলে। ভাগ্য ভাল থাকলে হয়তো দেখা হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় কোন তারকার সাথে।
বেশ কিছুদূর সামনে গেলে দেখা পাওয়া যায় একটি মরানদী। এটি তুরাগ নদীরই একটি শাখা। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি নান্দনিক সংযোগ সেতু। এপাড়ে উত্তরার নতুন প্রজেক্ট অন্যদিকে মিরপুর। এই সেতুর উপর দাড়ালে আঁকা-বাঁকা নদীর নজরকাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পরিত্যক্ত নৌকা। জাল ফেলে মাছ ধরছে জেলেরা। অদ্ভুত, অসাধারণ, রোমাঞ্চকর ও মনোরম পরিবেশে প্রিয়জনকে নিয়ে কাটিয়ে আসতে পারেন দারুন এক বিকেল।
ভ্রমনপিপাসুদের জন্য এখানে রয়েছে পাড়বাঁধানো লেক যা দিয়াবাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুনে। ভ্রমন আরো উপভোগ্য করতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে লেকের এদিক ওদিক থেকে নৌকায় করে ঘুরে আসার সুব্যবস্থা। চারদিকে শুনশান নীরবতা। একটু পর পর সেই নীরবতা ভেঙ্গে সাঁই সাঁই করে উড়ে যায় উড়োজাহাজ! অদ্ভুত সুন্দর একটি দৃশ্য। খুব কাছ থেকে উড়োজাহাজ উড়া দেখতে চাইলে এর চেয়ে ভাল কোন জায়গা হবে না। মাথা উঁচু করে উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজ দেখা মনে করিয়ে দিবে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলাকে। সে এক অসাধারণ অনূভুতি।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা এক দম্পতির সাথে কথা বললে তিনি জানান, পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হয়না। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শুরু করে বাচ্চাদের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, দোলনাসহ আরো বিভিন্ন খেলাধুলার অনুষঙ্গ।
মোট কথা : দিয়াবাড়িতে এলে প্রকৃতির সাথে হারিয়ে যাই। আমার ছোট বাচ্চার পছন্দ লেকে নৌকায় বেড়ানো। ভ্রমনকারীদের জন্য ভ্রাম্যমান খাবারের দোকানও রয়েছে এখানে। এখানে প্রতিদিন হাজারের উপর দর্শণার্থীদের সমাবেশ ঘটে তবে নৌকার স্বল্পতার অনেককেই দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
কিভাবে যাবেন ?দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে উত্তরা রুটের যেকোন বাসে চড়ে হাউজবিল্ডিং বাস স্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখানে নর্থটাওয়ার ও মাসকট প্লাজার সামনেই দেখতে পাবেন দিয়াবাড়ি যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান রিক্শা। রিক্শায় না চড়তে চাইলে উঠে পড়তে পারেন লেগুনায়। লেগুনা আপনাকে নামিয়ে দেবে সরাসরি দিয়াবাড়ি বটতলায়। লেগুনার ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা (ঈদে)। আর সেখানে রিক্সা ভাড়া ঈদ মৌসুমে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
শরতে শহুরে শত ব্যস্ততার ফাঁকে কিংবা কোন উপলক্ষে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেড়িয়ে আসুন উত্তরার দিয়াবাড়িতে। কাটিয়ে আসুন মানসম্মত মনে রাখার মত বর্ণিল একটি দিন। রাজধানীর বুকে দিয়াবাড়ির এই অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে সর্বক্ষন বিমোহিত করে রাখবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। উত্তরার দিয়াবাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে নিয়ে যাবে শুভ্রতায় পরিপূর্ণ কোমল এক রাজ্যে। তাই উপভোগ করে আসুন ঋতুরাণী শরতের প্রধান আকর্ষণ কাশফুলের নরম ছোঁয়া।