হরিণঘাটা বন হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র :
হাজারো বৃক্ষের সবুজের মাঝে হরেক রকমের পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ। মাঝে মাঝেই হরিণের চলাফেরা চোখে পড়ে আর বনমোরগের ডাক ভেসে আসে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বনে হেঁটে চলার জন্য তৈরি করা হয়েছে পথ। সাগরের কোল ঘেঁষে এমন এক চমৎকার বন দাঁড়িয়ে আছে বরগুনা জেলার পাথরঘাটায়। হরিণঘাটা বন নামে পরিচিত এই জায়গায় এখন বাড়ছে আকর্ষণ।
হরিণঘাটা বনের পূর্বে বিষখালী আর পশ্চিমে বলেশ্বর নদ এসে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। মোহনায় গড়ে উঠেছে এ প্রাকৃতিক বনটি। বিভিন্ন বৃক্ষরাজির সুবাদে এ বনের পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। হিংস্র প্রাণী নেই। আছে হরিণ, বনমোরগ, বানর, শূকর, গুইসাপ, নানা প্রজাতির সরীসৃপসহ নানান প্রজাতির বন্য প্রাণী। রয়েছে অন্তত ৫০ প্রজাতির পাখি আর বন্য প্রাণিকুল।
শীত মৌসুমে এই বনে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখিরা। এখানকার গেওয়া, কেওড়া, পশুর আর সৃজিত সুন্দরী আর ঝাউবন আগলে বেঁচে থাকে অন্তত পাঁচ হাজার বনজীবী। বনের ভেতরে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০-১২টি খাল। সেই সঙ্গে বনের দক্ষিণ সীমানায় সাগর মোহনার চরে গড়ে উঠেছে শুঁটকিপল্লী। সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বন আর সাগরে সূর্যের উদয়-অস্তের দৃশ্য দেখার সুযোগ পাওয়া প্রত্যেক পর্যটকের জন্যই বড় আকর্ষণ।
বনের ভেতরে ফুট ট্রেইল (বনের ভেতর পায়ে চলা সেতু আকৃতির পথ) দর্শনার্থীদের নিসর্গ মায়ায় টানছে। ফুট ট্রেইল নির্মাণের ফলে হরিণঘাটা বন আকর্ষণীয় পর্যটনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বনের ভেতর উঁচু পিলারের ওপর পায়ে চলা পথ ধরে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে বনের প্রাণ-প্রকৃতি ও সাগরতীর দর্শনের সুযোগ পাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে সাগর মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে হরিণঘাটা বন। ১৯৬৭ সাল থেকে বন বিভাগ এর সম্প্রসারণে নানা প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বন সৃজন শুরু করে। বর্তমানে ২০ হাজার একর জুড়ে দৃষ্টিনন্দন এই বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, গেওয়াসহ সৃজিত সুন্দরী ও ঝাউবন রয়েছে।
সংরক্ষিত এই নয়নাভিরাম বনকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিলের মাধ্যমে বন বিভাগ হরিণঘাটা বন ও সাগরতীর দর্শনের লক্ষ্যে নির্মাণ করছে ফুট ট্রেইল। এছাড়া বনের ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, বিশ্রামাগার ও গোলঘর।