ওপরে শরতের নীল আকাশ, নিচে বিলের হাজার হাজার পদ্ম। এ যেন এক স্বর্গীয় আবেশ। দেখে মনে হয়, সবুজের মাঝে গোলাপি বিছানা। পদ্মকে জলজ ফুলের রানী বলা হয়। প্রকৃতির এই মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছে এখানে।
বলছি কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার কাইক্কার বিলের কথা, যা এখন পদ্মবিল নামেই পরিচিত। প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে এখানে। যতদূর চোখ যায় পদ্মফুলের ছড়াছড়ি। এমন অপরূপ দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে বারবার। প্রাকৃতিকভাবেই এ বিলে পদ্মফুলের জন্ম। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে এই পদ্মবিল। চারদিকে পদ্মের মৃদু-মিষ্টি ঘ্রাণ প্রকৃতিকে আরও বেশি মধুময় করে তোলে। কিন্তু কিছু প্রভাবশালীর মাছ চাষের কারণে হুমকির মুখে এই পদ্মবিলের অস্তিত্ব। পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখতে এসে অনেকে প্রচুর ফুল তুলে নষ্ট করে। এতে বিপন্ন হচ্ছে পদ্ম। প্রকৃতি হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য ও ভারসাম্য। শিশু-কিশোরের দল ডিঙি নৌকায় ফুল তুলে আনছে। বিলের থৈ থৈ পানিতে ডিঙি নৌকা আর কলাগাছের ভেলায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায় দুরন্ত শিশুরা।
এ বিলের মাঝে গেলে যে কোনো দর্শনার্থীই মুগ্ধ হয়ে যাবে। বর্ষায় ফুল ফোটা শুরু হয়। তবে শরতে অধিক সংখ্যায় ফোটে এবং এর ব্যাপ্তি হেমন্তকাল অবধি। ফুটন্ত ফুলের বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। পাতা পানির ওপরে ভাসলেও এর কন্দ বা মূল থাকে পানির নিচে মাটিতে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে গাছ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাতা বেশ বড়, পুরু, গোলাকার ও সবুজ। পাতার বোঁটা বেশ লম্বা, ভেতরের অংশ অনেকটাই ফাঁপা। ফুলের ডাঁটার ভেতরের অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য ছিদ্র। আকারে বড় এবং অসংখ্য নরম কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে পদ্মফুলের সৃষ্টি। ফুল ঊর্ধ্বমুখী, মাঝে পরাগ। ফুটন্ত তাজা ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে।
ফুল ফোটে রাত্রিবেলা এবং ভোর থেকে রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির আগ পর্যন্ত প্রস্ম্ফুটিত। রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুল সংকুচিত হয়ে যায়। পদ্মফুলের রং মূলত লাল, সাদা ও গোলাপির মিশ্রণযুক্ত। তা ছাড়া নানা প্রজাতির পদ্মফুল দেখা যায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি অতি প্রিয় ও পবিত্র ফুল। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় পদ্মফুলের রয়েছে বেশ চাহিদা। শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর নিচে ঝিরঝির দখিনা বাতাসে দোল খায় একেকটা পদ্ম। নীলাভ ফুলগুলোর সঙ্গে ভ্রমর-মৌমাছি-ডাহুক, বকসহ রং-বেরঙের পাখপাখালিরও রয়েছে অনিন্দ্য মিতালি।