কলাগাছের ভেলা বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অভিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের শেকড় প্রোথিত গ্রামীণ জীবনে কৃষি, গৃহস্থালি, পারিবারিক, সামাজিক ও অন্যান্য কাজে কলাগাছ নানাভাবে নানা কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ জলপথের প্রধান বাহন। অনেকের জীবনেই এসবে চড়ার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু কলাগাছের ভেলা জলযান হিসেবে ব্যবহার এ প্রজন্মের মানুষের কাছে একেবারেই অভিনব মনে হতে পারে। যারা গ্রামে বড় হয়েছে জলের প্রাচীন বাহন কলাগাছের ভেলায় ভেসে বেড়ানো স্মৃতিতে কমবেশি গেঁথে আছে।
গ্রামের সহপাঠিসহ অন্য কিশোরদের সাথে বর্ষায় কলাগাছ কেটে ভেলা তৈরি করে সে ভেলা পানিতে ভাসিয়ে তাতে চড়ে দল বেঁধে হৈচৈ করে গোসল করা, মাছ ধরা, নদীর এপার-ওপারে, এখানে-ওখানে যাওয়া আসা করা ছিল তাদের রুটিন কাজ।
কলাগাছের ভেলার সাহায্যে এক সময় মানুষ নিকটবর্তী দূরত্বে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় পারাপার হতো। তখন নৌকার এতো প্রচলন ছিল না। বর্ষাকালে গবাদি পশুর খাবার সংগ্রহ করা হতো এই ভেলার মাধ্যমে। গ্রামের নারী, পুরুষ ও শিশুরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে বিশেষ করে বন্যার সময় যখন সব রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়; স্কুলে, কলেজ, মাদ্রাসা, হাট-বাজার ও আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়াসহ অন্যান্য কাজে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তখন কলা গাছের ভেলায় চড়ে স্বল্প দূরত্বে যাওয়া-আসার কাজে কলাগাছের ভেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতো।