ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে তার নেতৃত্বে ভূমিধস জয় পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার উপনির্বাচনে রেকর্ড জয় পেয়ে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তিনি দিল্লি জয়ের দিকে যাচ্ছেন বলে আশাবাদী তার সমর্থকরা।
এদিকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল হিসেবে ভারতীয় কংগ্রেস উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় মমতার দলই এ স্থান পূরণ করতে যাচ্ছে বলে অনেক বিশ্লেষকদের ধারণা।
বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায় ভূমিধস জয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রাচীণ দল ভারতীয় কংগ্রেসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আলোচিত কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে একজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীও রয়েছেন। সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মোদিবিরোধী মুখ হিসেবে আস্থাভাজন হয়ে উঠছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচের ভেলের বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের শূন্যস্থান পূরণের মাথায় নিয়েই রাজধানী দিল্লিতে ক্যাম্প ফেলেছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গোটা দেশ জুড়ে বিজেপির, থুরি মোদী-শাহের রমরমা বাজারে পশ্চিমবঙ্গে মমতার তৃণমূল যেভাবে বিজেপির রথ আটকে দিয়েছে, তা জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ। ভঙ্গুর কংগ্রেস, ফ্যাকাশে আঞ্চলিক দলগুলির বাজারে মমতার তৃণমূল আঞ্চলিক হয়েও জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত মমতার নাম মুখেমুখে ঘুরছে। বিচক্ষণ রাজনীতিক মমতাও বুঝতে পেরে গেছেন, হয় এবার নয় নেভার। অর্থাৎ, কংগ্রেসের অঙ্গুলিহেলনে নয়, তার অঙ্গুলিহেলনে কংগ্রেস এবং বাকি বিজেপি বিরোধী জাতীয় এবং আঞ্চলকি দলগুলি মঞ্চ তৈরি করবে। সেই মঞ্চই ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রধান বিজেপি-বিরোধী শক্তি হয়ে উঠবে। এবং তারা যদি একত্রে লড়াই করতে পারে, তাহলে জাতীয় রাজনীতিতে মমতা হয়ে উঠবেন প্রধান নেতা। এমনকি, প্রধানমন্ত্রীও!
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (এবারের বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ের পর) দিল্লিতে। তাই পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সারির প্রায় সমস্ত সাংবাদিকই দিল্লিতে। প্রেস ক্লাবে তাদের সঙ্গে আড্ডা হচ্ছিল দিল্লির সাংবাদিকদের। সেখানে এক প্রথম সারির খবরের কাগজের দুঁদে রিপোর্টার বলেই ফেললেন, মোদি-মমতা বৈঠক আসলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক নয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক। মমতা আসলে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালে মোদী ম্যাজিক ছিল। কংগ্রেস বিরোধী হাওয়া ছিল। ২০১৯ সালেও মোদীর ক্যারিশমা ছিল। ছন্নছাড়া বিরোধী অবস্থান ছিল। কিন্তু ২০২০ থেকে দেশ জুড়ে বিজেপি বিরোধী হাওয়া ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। সিএএ বিরোধী আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি সব মিলিয়ে বিজেপি আর তার আগের পরিস্থিতিতে নেই। ফলে বিরোধীদের জোটবদ্ধ হওয়ার এটাই যে মোক্ষম সময়, তা নিশ্চিত।
এর আগে বিধান সভায় ভূমিধস জয়ের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রচারণা শুরু হয়। আগামী লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী ‘মুখ’ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চায় ভার্চুয়ালবাসীদের অনেকেই। টুইটারে ট্রেন্ড হয়েছিল, ‘বাঙালি প্রধানমন্ত্রী’ হ্যাশট্যাগ প্রচার।