বিশ-বিশ চল্লিশ ওভারের যে ম্যাচে রঙ পাল্টায় শেষ ৫ ওভারে, আর পুরো ম্যাচেই আধিপত্য করা দল ফাইনালের টিকেট হাতে পেতে পেতেও তা হারিয়ে ফেলে প্রতিপক্ষের হার না মানা লড়াকু মানসিকতার কাছে, তাকে কী বলা যায়? ক্রিকেটীয় রূপকথা হয়তো কিছুটা হলেও প্রকাশ করতে পারবে ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ডের সেমিফাইনালের রোলার কোস্টার রাইডকে। তবে জিমি নিশাম-ড্যারিল মিচেলদের ঝড়ে যখন পাল্টে যায় সকল হিসাব, আর বৈশ্বিক আসরে নিউজিল্যান্ড হারায় ইংল্যান্ডকে, সেখানে প্রতিশোধও থেকে যায় বড় একটা জায়গা জুড়ে। অবশেষে, অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বাকপের ফাইনালে পৌছালো কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড।
বড় রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথমেই মার্টিন গাপটিল ও কেন উইলিয়ামসনের উইকেট হারিয়ে বড়সড় ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। ক্রিস ওকসের করা প্রথম বলে কাভারের উপর দিয়ে চার মেরে বুঝিয়েছিলেন গাপটিল, তিনি ক্রিজে যতক্ষণ থাকবেন রান তাড়ায় ততক্ষণই ফেভারিট থাকবে নিউজিল্যান্ড। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় করেই মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন রান তাড়া করায় কিউইদের প্রধান ভরসা মার্টিন গাপটিল। তারপর অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটের দিকেই তাকাতে যাচ্ছিল কিউইরা। কিন্তু ওকসকে স্কুপ করতে গিয়ে তিনিও টাইমিংয়ে হেরফের ঘটিয়ে আদিল রশিদের ক্যাচে পরিণত হন মাত্র ৫ রান করে।
দলীয় ১৩ রানের মাথায়ই ব্যাটিং অর্ডারের প্রধান দুই স্তম্ভকে হারানোর পর ওপেনার ড্যারিল মিচেলের সাথে ৮২ রানের জুটিতে দলকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে। এই ৮২ রানও আসে ৬৬ বলে। ফলে কোনোদিকেই তখনও খুব বেশি হেলে পড়েনি ম্যাচ। তবে দ্রুত রান তোলার তাগিদেই লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে সাজঘরে ফেরেন কনওয়ে। ড্যারিল মিচেল এখনও হাত খুলে রান তুলতে পারছেন না বলে কিউইদের ভরসার প্রধান জায়গাতেই ছিলেন বাঁহাতি কনওয়ে। তার বিদায়ে আবারও ম্যাচ জয় থেকে আরও একটু দূরে সরে যায় নিউজিল্যান্ড।তারপর আরেক হার্ড হিটার গ্লেন ফিলিপসও পা দিয়েছেন লিভিংস্টোনের লোভনীয় ফ্লাইটে। লং অফে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনিও।
কিন্তু জিমি নিশাম মাত্র ১১ বলেই বুঝিয়ে দিলেন, খেলা তখনও বাকি অনেকটুকু! বাউধাবিতে কিছুক্ষণ বইলো নিশামের ঝড়। তাতে তিনি ২৭ রানই তোলেননি, ঘুরিয়ে দিয়েছেন ম্যাচের মোড়। ঘুরে গেছে ইংলিশদের পরিকল্পনা! নিশাম যখন আউট হন তখনও কিউইদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২ ওভারে ২০ রান। সাথে ছিলেন ওপেনার ড্যারিল মিচেল। কেবল স্ট্রাইক রোটেট করায় নন স্ট্রাকিং প্রান্তেই যিনি ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়, গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন তিনি; সেটাও একদম মোক্ষম সময়ে। বাকি কাজটুকু সাড়লেন তিনি, আর অপরাজিত থেকে গেলেন ৪৮ বলে ৭৩ রানের এক দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলে। ওকসের বলে উইনিং শটটা যখন তিনি হাঁকান, ম্যাচের বাকি ১ ওভার! ২০১৯ সালের মহাকাব্যিক ফাইনালকে বিদায় করে এবার ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের দ্বৈরথের যুক্ত হলো আরেকটি উপাখ্যান। যেখানে জিমি নিশামের বীরত্বের পর হুট করেই পার্শ্বনায়ক থেকে মূল চরিত্রে চলে আসেন ড্যারিল মিচেলের মতো এক নায়ক।
এর আগে, টস হেরে ব্যাট করে মইন আলি ও ডেভিড মালানের ব্যাটে ভর করে ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়ে এউইন মরগ্যানের ইংল্যান্ড, যা কিউদের ব্যাটিংয়ের ১৫ ওভার পর্যন্তও নিরাপদ মনে হচ্ছিল। তবে কে জানে, মরুতে কখন কে ঝড় তুলে পাল্টে দেয় দাবার চাল!