সাম্প্রতিক খারাপ পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে বাজে অতীত আর সঙ্গে টানা হারের শঙ্কা, আরো ছিল মাঠের বাইরের তুমুল সমালোচনা। সব কিছুকে যেন এক তুড়িতে উড়িয়ে দিয়েই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ।
সুপার টুয়েলভের নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ৯ রানে হারিয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করলো টিম টাইগার্স। প্রথম পর্বে তিন ম্যাচ খেলে সুপার টুয়েলভে ওঠা নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ।
হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪৪ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ১৪৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের দাপটে ১৩৫ রানেই শেষ হয়ে যায় ডাচদের ইনিংস। ৯ রানে ম্যাচ জিতেই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে সাকিব আল হাসানের দল।
হোবার্টে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে ছিল বৃষ্টির শঙ্কা। সেই বৃষ্টি ম্যাচের ভেতর বাগড়া দিয়েছে দুই দুই বার। তবে তাতেও আটকানো যায়নি বাংলাদেশের জয়। দুই দলের দুই ইনিংসেই দুইবার বৃষ্টি বাঁধায় বন্ধ হয়েছে ম্যাচ। তবে দুইবারই আবার কিছু সময়ের ভেতরই শুরু হয়েছে খেলা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলো বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাজমুল হসেন শান্ত আর সৌম্য সরকার। পাওয়ার প্লে শেষে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৭ রান। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌম্য সরকারের সঙ্গী হয়েছেন ছন্দে না থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত।
ছন্দে না থাকা সেই শান্তই যেন পাওয়ার প্লে’তে এগিয়ে নিলো বাংলাদেশকে। ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই বাংলাদেশের জন্য উড়ন্ত শুরুটা অবশ্য এনে দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। ফ্রেড ক্লাসেনের ওভার থেকে দুই বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২ রান।
দ্বিতীয় আর তৃতীয় ওভারটা একটু দেখেশুনে খেললে কিছুটা কমে রান তোলার গতি। চতুর্থ ওভারে এসে হাত খোলেন শান্ত। বাস ডি লিডের ওভার থেকে টানা দুই চারে ১৪ রান তোলেন সেই টাইগার ওপেনার।
ফ্রেড ক্লাসেনের পরের ওভারের প্রথম দুই বলেও টানা দুই বাউন্ডারি। পাঁচ ওভারে শেষেই স্কোরবোর্ডে ৪৩ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।ভালো শুরুর পরও পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে এসে ছন্দপতন বাংলাদেশের।
পল ভ্যান মেকেরেনের ওই ওভারের প্রথম বলেই মিডউইকেটে বাস ডি লিডের হাতে ধরা পড়েন সৌম্য। ১৪ বলে ১৪ রান করেই সাজঘরে ফেরেন এই টাইগার ওপেনার। ৪৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তিন নম্বরে নামা লিটন দাস ওই ওভারটি দেখেশুনে খেললে পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪৭ রান।
উদ্বোধনী জুটির সঙ্গীকে হারিয়ে আর যেন মন টিকলো না শান্তরও। সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই ভ্যান বিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২০ বলে ২৫ রান করেই ফিরে যান শান্ত।অষ্টম ওভারে কোনো উইকেট না হারালেও লিটন আর অধিনায়ক সাকিব মিলে তোলেন ৬ রান।
নবম ওভারে এসে খেই হারালেন ফর্মে থাকা লিটন দাস। ভ্যান বিকের করা ওই ওভারের চতুর্থ বলে মিড অফে টম কুপারের হাতে ধরা পড়েন লিটন। ১১ বলে ৯ রান করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
১০ম ওভারের প্রথম বলে আরেকবার ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। শারিজ আহমেদের প্রথম বলেই ডিপ মিডউইকেটে বাউন্ডারি লাইনে বাস ডি লিডের হাতে ধরা পড়েন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ৯ বল খেলে ৭ রান করেন তিনি। শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো কিছুর আভাসই দিচ্ছিলো দুই টাইগার ওপেনার। তবে অলিখিত নিয়ম অনুসারেই যেন হঠাৎ করেই ছন্দপতন বাংলাদেশের। ভালো শুরুর পরও ২০ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে এবার উল্টো চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
৪৩ থেকে ৬৩, এই ২০ রানের ব্যবধানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি দিতে হোবার্টের আকাশ জুড়ে নেমে আসে বৃষ্টির ধারা। ৯.৩ ওভার খেলা হওয়ার পরই মাঠ ছেড়ে উঠে যেতে হয় দুই দলকে। অবশ্য সেটি বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। মিনিট পাঁচেকের ভেতরেই আবার মাঠে নামে দুই দল।
বৃষ্টি বাঁধার পর ১১তম ওভারে ইয়াসির আলীকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে আরেকটি ধাক্কা দেন পল ভ্যান মেকেরেন। ওভারের শেষ বলে দারুণ এক ইয়র্কারে ইয়াসিরের স্ট্যাম্প ভাঙলে ৭৬ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে টাইগারদের হয়ে প্রতিরোধ গড়েন আফিফ আর নুরুল হাসান সোহান মিলে। পরের তিন ওভারে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই এই দুজন মিলে তোলেন ১৮ রান। ১৫তম ওভারে এসে হাত খোলেন আফিফ। শারিজ আহমেদের ওই ওভার থেকে টানা চার ছয়ে ১৩২ রান তলেন আফিফ। বাংলাদেশের রানও ছাড়ায় ১১০’র ঘর।
পরের ওভারে ২৮ রানে থাকা অবস্থায় কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছেন আফিফ। ডিপ মিডউইকেটে আফিফের ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি টিম প্রিঙ্গল। ১৬তম ওভারে জীবন পাওয়ার পর ১৭তম ওভারের শেষ বলে মেকেরেনকে বাউন্ডারি মেরে টাইগারদের স্কোরবোর্ডে ১২০ রান তলেন আফিফ।
পরের ওভারে প্রথম বলেই সোহানকে ফিরিয়ে টাইগারদের আরেকবার ধাক্কা দেন বাস ডি লিড। ১৮ বলে ১৩ রান করে সোহান ফিরলে ভাঙে আফিফের সঙ্গে ৪৪ রানের রানের জুটি। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন মোসাদ্দেক। তবে ওভারের শেষ বলে আফিফকে হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ২ চার আর ২ ছয়ে ২৭ বলে ৩৮ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফিফ।
১২৯ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি দিয়ে ফ্রেড ক্লাসেনকে স্বাগত জানান মোসাদ্দেক। এক বল বাদেই ওভারের তৃতীয় বলে তাসকিন আহমেদকে শূন্য রানে ফিরিয়ে টাইগারদের ৮ম উইকেট তুলে নেন ক্লাসেন। বাস ডি লিডের করা ইনিংসের শেষ ওভার থেকে এক ছক্কায় ১০ রান তুললে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৪৪ রান।
১২ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় ২০ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক। ডাচদের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন পল ভ্যান মেকেরেন আর বাস ডি লিড।
১৪৪ রানের লড়াকু পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে এসেই আগুন ঝরাতে শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম দুই বলেই দুই উইকেট নিয়ে নেদারল্যান্ডকে শুরুর ধাক্কাটা দেন এই স্পিডস্টার।